রবিবার, ০৬ Jul ২০২৫, ১২:৩০ অপরাহ্ন
ভয়েস প্রতিবেদক:
রামু উপজেলার ৩০ হাজার ইয়াবা লুটের চাঞ্চল্যকর শেষ পর্যন্ত উপজেলা ছাত্রদল আহ্বায়ক সানাউল্লাহ সেলিম স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। সেইসাথে বিএনপি ও যুবদলের স্হানীয় ইউনিয়ন পর্যায়ের দুই নেতার সাংগঠনিক পদ স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।
গত ২৮ জুন বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ “ইয়াবা লুটের টাকা ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের অডিও রেকর্ড ভাইরাল” শীর্ষক সংবাদটি প্রকাশিত হয়।
সংবাদে বলা হয়, গত ২৬ জুন থেকে রামুতে ৩০ হাজার ইয়াবা লুটের ঘটনা নিয়ে একাধিক অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ উঠে, রামু উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সানাউল্লাহ সেলিমের নেতৃত্বে তিন লাখ টাকা সহ ইয়াবার চালানটি লুট করা হয়। এ ছাড়া লুট করা ইয়াবা বিক্রির ২৮ লাখ টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন স্থানীয় ছাত্রদল ও বিএনপির ২৩ নেতাকর্মী জড়িত।
এ ঘটনার পর দলীয় ভাবমূর্তি সংকটে পড়ায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনসহ এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি তদন্তের জন্য বিএনপি স্হানীয় পর্যায়ের তিন নেতার সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
তদন্ত কমিটি তদন্তের পর ঘটনাটি সঠিক মর্মে যথারীতি দলীয় ফোরামে প্রতিবেদন দাখিল করে। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর আজ (৩ জুলাই) স্বেচ্ছায় নিজের ফেসবুক আইডিতে ঘোষণা দিয়ে পদত্যাগ করলেন রামু উপজেলা ছাত্রদলের মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির আহ্বায়ক সানাউল্লাহ সেলিম।
তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে রামু উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ছানাউল্লাহ সেলিম নিজের ফেসবুক আইডিতে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে বলেন -‘বাংলাদেশ জাতীয়বাদী ছাত্রদল, রামু উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক পদ স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলাম।
কারণ সম্প্রতি সময়ে ষড়যন্ত্র ও রাজনৈতিক রোষানলে শিকার হয়ে আমার সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের মানক্ষুণ হচ্ছে, যা দিনদিন আমাকে মৃত্যু দিকে ধাবিত করতেছে। তাই আমি এ সিন্ধান্ত নিলাম।
সুখে থাক্, প্রাণের সংগঠন ছাত্রদল ভালো থাকুক, সুবিধাবাদীরা।’
তবে তিনি ইয়াবা লুটে নিজের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেছেন এবং দাবি করেন, স্থানীয় রাজনৈতিক বিরোধকে কেন্দ্র করে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
ওদিকে রাজারকুল ইউনিয়ন যুবদলের আহবায়ক মো. নুরুল কবিরের বিরুদ্ধে সংগঠনের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগের প্রেক্ষিতে, দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে তার আহবায়ক পদবী স্থগিত ঘোষণা করা হয়। একই সাথে রাজারকুল ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দানু মিয়ার পদও স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। রামু উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল বশর বাবু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক কাউসার আলম ইমু বলেন, “জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে যখন আমরা জনগণের আস্থা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সচেষ্ট, তখন কিছু ব্যক্তির অনাকাঙ্ক্ষিত কর্মকাণ্ড আমাদের সম্মিলিত প্রয়াসকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মূল আদর্শ ও লক্ষ্য থেকে সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন, এবং সংগঠন এসবের দায়ভার গ্রহণ করে না।”
কক্সবাজারে জেলা ছাত্রদলের নেতা মোহাম্মদুল হক জনি বলেন এরা দলের জন্য অভিশাপ।বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের নেতৃত্বে দল যখন সাধারণ মানুষের মনে জায়গা করে নিচ্ছে ঠিক সে সময়ে এই সব অভিশাপদের কারণে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে ।পদত্যাগ কোন সমাধান নয় ।
তিনি বলেন, এখন পদত্যাগ করলো দেখা যাবে কিছুদিন পর আবার যুবদল,সেচ্ছাসেবক দলে জায়গা করে নিবে।তাই তাকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হউক ।তা ছাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়ন যুবদলের আহবায়ক কে পদ স্থগিত করা হয়েছে কারণ কিছুদিন পর তাদের আবার দলে জায়গা করে দিবে তাদের যারা সেল্টার দিচ্ছে তারা ।তাই আমি জেলা বিএনপি ও জেলা যুবদলকে অনুরোধ করব তাদের যেন স্থায়ী ভাবে বহিষ্কার করা হয়।তাহলে সাধারণ মানুষের মনে দলকে নিয়ে ইতিবাচক ধারণা আসবে।
গত ২৬ জুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একাধিক অডিও রেকর্ডে ছাত্রদল ও বিএনপির অন্তত ২৩ নেতাকর্মীর মধ্যে ইয়াবা বিক্রির ২৮ লাখ টাকা ভাগাভাগির বিষয়টি উঠে আসে। অভিযোগ রয়েছে, আহ্বায়ক সেলিম একাই পেয়েছেন ১০ লাখ টাকা। অন্যদের মধ্যে কেউ পেয়েছেন ৮-১০ হাজার থেকে শুরু করে ২-৩ লাখ টাকা পর্যন্ত।
ঘটনার পর থেকে স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এদিকে ইয়াবা লুটের ঘটনাটির বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ হিসেবে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবার কি পদক্ষেপ নিচ্ছেন তা দেখার জন্য এলাকাবাসী অপেক্ষায় রয়েছেন মর্মেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি হচ্ছে।
ভয়েস/জেইউ।